ভর্তা খাবারের একটি ধরন যা বাঙালির খাদ্যাভাসের সংগে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অধিকাংশ বাঙালি তাদের নিত্যদিনকার খাবারে ভর্তা খেতে পছন্দ করে। সচ্ছল ঘরের প্রধান আহারে সাধারণত ভর্তা, ভাজি, দোপেঁয়াজি, ঝোল এবং ডাল অথবা ডালের পরিবর্তে টক পরিবেশন করা হয়। উপাদানের ভিন্নতার কারণে ভর্তার বিভিন্ন রূপভেদ রয়েছে। এদের মধ্যে সব থেকে সাধারণ ভর্তা হচ্ছে আলু ভর্তা।বাংলাদেশ এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন রন্ধনশৈলীতে বিভিন্ন রূপে ভর্তা বা ভর্তাজাতীয় খাবার দেখতে পাওয়া যায়। তবে এর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে বাঙালি রন্ধনশৈলীতে। বাঙালি নববর্ষ উদযাপনে পান্তাভাতের অন্যতম অনুষঙ্গ বিভিন্ন প্রকার ভর্তা।
আধুনিক বাংলায় ভর্তা শব্দটি শুধুমাত্র খাবার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় সংস্কৃত ভর্ত্তা থেকে আগত ভর্তা শব্দের অর্থ স্বামী। ভর্তা শব্দটি খুব একটা ব্যবহৃত না হলেও এর অপভ্রংশ রূপ ভাতার লোকজ বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়। বাংলায় কোন কিছু পিষে ফেলাকে ভর্তা বলা হয়। সকল প্রকার বাঙালি ভর্তা হাতে কিংবা বিভিন্ন উপায়ে পিষে তৈরি করা হয়ে থাকে। ভর্তা মানে দলাইমলাই। চিপে চিড়েচ্যাপ্টা করে ফেলা। ভর্তার সঙ্গে বাঙালি জাতির সুদূর ঐতিহ্যগত সম্পর্ক। ঠিক কবে থেকে বাঙালি জাতি ভর্তা খেতে শুরু করেছে তার কোনো নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস রচিত হয়নি। ধারণা করা যায়, হাজার বছর ধরেই বাঙালি ভর্তা খেয়ে আসছে। বিশেষ করে, শুঁটকি ভর্তা। মাছে-ভাতে বাঙালির শুঁটকির ভর্তা খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না কারণ মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা ছাড়া মৎস সংরক্ষণের অন্যকোন ছিলোনা। তার সঙ্গে কৃষিভিত্তিক সমাজে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়েছিল আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা ইত্যাদি সব্জিভিত্তিক ভর্তা।
নানান পদের ভিন্ন ভিন্ন সাধের জনপ্রিয় সব ভর্তার রেসিপি নিয়ে আমাদের এই এপ। আশা করি সবার ভালো লাগবে।