মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্ট সকল মানুষদের মধ্য থেকে কিছু বিশেষ বিশেষ নেয়ামত দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে বিশেষায়িত করে কয়েকজন নারী সৃষ্টি করেছেন যাঁদের গুণাগুণ তুলনা করা নবী করীম (সাঃ)-এর নগন্য উম্মতের সাধ্যের বাইরে। তাঁদের মধ্য থেকে উন্মুহাতুল মুমেনীনগণের ইতিহাস শুনতে ও জানতে প্রত্যেক মুসলমান চেষ্টা করেন।
রমণীদের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জননী এবং ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতীত অপর কোন মহিলা আয়েশা হতে মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারেন নাই। হুযুর (সাঃ)-এর বিবিগণের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) ছিলেন তৃতীয় এবং ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন নবী করীম (সাঃ) প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)-এর সন্তান।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) ছিলেন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর সর্বকনিষ্ঠা কন্যা। গুণে, পুণ্যে ও মর্যাদায় তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে প্রাণাপেক্ষা বেশিভালোবাসতেন। তিনি স্বীয় কনিষ্ঠা কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করতে গিয়েনিজেই বলেছেন যে, আমার কন্যা ফাতিমা নারী জগতের মাথার মুকুট এবংবেহেশতী নারীদের সরদার হবে।
হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং মর্যাদার অভাব নেই। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে দুনিয়ার সমগ্র নর-নারীদের মধ্যে তিনি সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় ছিলেন। হযরত আশেয়া (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীস দিয়েও এটা প্রমাণিত হয়েছে।
একদিন কথার কথায় হযরত আয়েশা (রাঃ) স্বয়ং রাসূল কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- মা ফাতেমা আমি এ জগতের আপনার একগাছি চুল হয়েও যদি জন্ম লাভ করতাম, তবে আমার জীবন সার্থক হতো।
হযরত নবীকরীম (সাঃ)-এর সর্বাধিক প্রিয় পুরুষ ব্যক্তি ও তাঁর স্নেহধন্য পেয়ে খোদা হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন।
মুসলিম জাহানের প্রাতঃস্বরণীয় দু'জগত বিখ্যাত ইমাম হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হোসাইন (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী করীম (সাঃ)-এর বংশ রক্ষা পেয়েছে।
হযরত ফাতেমা (রাযিঃ) এর ১০টি অমীয় বাণী :
১) আমার প্রিয় বোনেরা! তোমরা মনে রাখবে-নামায, রোযা যিকির ও আল্লাহ তায়ালার একনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই এ পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি, তাই তোমরা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
(২) নিজ আপনজন ও প্রতিবেশীদের প্রতি ভাল ব্যবহার করবে কারণ অসৎ আচরণ আল্লাহ তায়ালার ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট সবচাইতে অপছন্দের।
(৩) দুঃখী ও অসহায় জনের প্রতি সদয় হবে। কারণ কেয়ামতের দিনে যখন তুমি সবচাইতে অসহায় হবে তখন ইহাই তোমাদের জন্য সহায় হয়ে দাঁড়াবে।
(৪) আমার পিতা বলেন, আল্লাহ তায়ালার পরে যদি কাউকে সাজদা করার নির্দেশ দেয়া হতো; তবে নারীদের প্রতি নির্দেশ হতো নিজ নিজ স্বামীকে সাজদা করার। অতএব প্রতিটি নারীর উপর তার স্বামীর প্রভাব ও দাবী কত বেশি। তাই নিজ জীবনের বিনিময়ে স্বামীর মনঃতুষ্টির জন্য সচেষ্ট হও। স্বামীর সূখে-দুঃখে তার সহযোগিনী হও। রাতে পদচুম্বন করে শয়ন কর। প্রভাতে পদধূলি নিয়ে শয্যা ত্যাগ কর।
(৫) স্বামী ও তার গুরুজনদের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন কর। তবে আল্লাহ তায়ালা আর তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে তোমাদের পক্ষে।
(৬) বিপদে ধৈর্য্য ধারণ কর। আর তার পথ হলো যে সব লোক তুমি অপেক্ষা সুখী তাদেরকে না দেখে যে সব লোক তুমি অপেক্ষা বিপদগ্রস্ত, তার প্রতি তাকিয়ে নিজ অবস্থার জন্য আল্লাহ তায়ালার শোকর গুজারী কর। প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ কর। আর শেষ কর আলহামদুলিল্লাহ বলে। তবেই সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভে সক্ষম হবে তোমরা।
(৭) নিজ প্রতিটি ভুল ও পাপের জন্য অনুতপ্ত হও। আর কখনও পর্দার খেলাফ করো না। নিজ সতীত্বের প্রতি সজাগ থাক। কারণ নারী জীবনের সবচাইতে বড় সম্পদ তার সতীত্ব। আর তাকে টিকিয়ে রাখার উত্তম পথ (আত্মিক ও বাহ্যিক) পর্দা।
৮) উচ্চস্বরে কথা বলবে না। স্বামীর অনুগত হও। তার সেবায় আত্মনিয়োগ কর। কারণ তার চরণ তলেই রয়েছে তোমার জান্নাত।
(৯) স্বামীর সব সম্পদই তোমার। তবু তাঁর অনুমতি ছাড়া কাউকেও কোন কিছু দিও না। নিজ প্রয়োজন যত বড়ই হোক না কেন স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোথাও যেও না। এমনকি স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কোন নফল ইবাদত পর্যন্ত স্ত্রীর জন্য অপরাধ।
(১০) শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রদর্শন কর। কারণ, তাদের দুআর মাঝেই নিহিত তোমার স্বামীর জীবনের সব মঙ্গল আর অমঙ্গল। এসব কথা মেনে চলতে চেষ্টা কর। এতেই স্বার্থক হবে তোমার এ নারী জন্ম। আর পরকালে ও এসব নসীহত পালনকারিনীর মুক্তির জিম্মাদার হবেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আর তাঁর হাবীব (সাঃ)।