ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু জীবনেতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। অন্ধকার যুগে আলোর পথে তাঁর আগমন- যা আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। যা বিশ্বচরাচরে ইসলাম প্রচারের এক নব দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তলাভের পর তা প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে কুরাইশ সম্প্রদায় সর্বদিক থেকে রাসূলের প্রতি নানান প্রতিবন্ধকতাসহ জীবন বিপন্নের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এর মধ্যে ওমরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীতে তাঁর চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় যা অনাগতকাল পর্যন্ত ইসলামের প্রতি তাঁর ত্যাগতিতিক্ষা ও অবদান মানুষের মনে বিরাজ থাকবে। তাঁর ইসলামের ক্ষেত্রে অবদানমূলক কাহিনী ইতিহাস ও ধর্মীয় গ্রন্থের পাঠকগণের নিশ্চয় অজানা নয়।
মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু মৃত্যুর আগে খলিফা পদে হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুকে তাঁর উত্তরাধিকারী পদে মনোনীত করে যান এবং জনগণ তা মেনে নেন। তাঁর খিলাফতলাভ ইসলামের জন্য অপরিসীম মূল্য বলে গণ্য হয়। সৈয়দ আমীর আলীর ভাষায় কঠোর নীতিজ্ঞান ও উত্তম পদ্ধতি ও শাসনকাল ছিল অত্যন্ত গৌরবময় এবং তা দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছিল। আরবের অভ্যন্তরীন শাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠনে হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু অত্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের যে প্রচার প্রসার এতে তাঁরই অবদানের ফলশ্রুতি। কিছু ইসলাম বিদ্বেষী ঐতিহাসিক তাঁকে স্বেচ্ছাচারী ও জালেম শাসক বলে অভিহিত করে, অত্যাচারকে তাঁর হত্যাকান্ডের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা কখনো সত্যি নয়। বরং একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। তাঁর মত একজন প্রকৃত ন্যায়পরায়ণ দক্ষ ও আল্লাহভীরু শাসক ইসলাম ও মুসলমানগণের তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসে আর আসেনি। তাঁর শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি ছিল ইনসাফভিত্তিক সমাজ। তাঁর মেধা, পরিশ্রম, অর্থসম্পদ সবই ছিল জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। কোন বিবেকবান মানুষ এমন মানবতাবাদী, ন্যায়পরায়ণ শাসক হত্যার পরিকল্পনার কথা চিন্তা করতেও আমাদের বিবেকে সায় দেয় না। অথচ সে মহান খলিফাকে এক ক্রীতদাসের হাতে তাঁর জীবনাবসান হতে হয়েছে। এটাই বাস্তব সত্য।"