হাসির অদম্য শক্তির কথা বাংলার কবি এভাবে প্রকাশ করেছেন, 'হাস্যমুখে অদৃষ্টের করবো মোরা পরিহাস'। বস্তুত হাসির বিচিত্রমুখীন প্রাণশক্তির প্রকাশ সর্বজনবিদিত। মানবজীবনে প্রাণদায়ীশক্তিরূপে বিবেচিত হাসির গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ ধারাই চিহ্নিত হয়েছে। বহু কৃতী লেখকের বিশিষ্ট রচনায় সেই ধারা পুষ্ট হয়ে চলেছে গল্পরূপ সৃষ্টির প্রথম যুগ থেকে।
হাস্য নামে ক্রিয়াটির মধ্যে রয়েছে বহুবিচিত্র ও বর্ণময় অভিব্যক্তি। আরও খোলসা করে বলা যায়, হাসি রয়েছে হরেক রকম। যেমন নাম করা চলে, মিচকে হাসি, ফিচকে হাসি, ফোকলা হাসি, অট্টহাসি, দেখন হাসি, মৃদু হাসি— আরও আছে হরেকরকম। এক এক হাসির গুণও ভিন্ন। আবার এই বিচিত্র হাসির কারিকুরিও সুনিপুণভাবে ধরা পড়েছে দেশে দেশে দক্ষ লেখকদের কলমে। সেসব লেখার চাহিদা অম্লান। পাঠকও দুর্মর।
আসলে হাসি যেমন দুঃখের মতোই জীবনের অঙ্গ, তেমনি হাসির সার্থক গল্পও মানুষের চিরকালের প্রিয় সঙ্গী। আজকাল তো নৈপিত্তিক জীবনে রূঢ় বাস্তবতার চাপে মানুষের জীবন থেকে হাসি মিলিয়ে যেতে বসেছে। এই নিয়ে তাবৎ শরীরবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের দুর্ভাবনার অন্ত নেই। তাঁরা নিদান দিয়েছেন, হাসি জীবনের সদাসৃজনশীল প্রাণশক্তি। হাসি মানুষের পরমায়ু সংরক্ষক। এর ফলে এখন কেবল আমাদের এই কলকাতা শহরেই নয়, পৃথিবীজোড়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলেছে লাফিংক্লাব। শোনা যায় ক্লাবগুলির সদস্যসংখ্যাও সুবিপুল।
আমরা এই জীবনদায়ী টনিকটি সর্বসাধারণের জন্য অতি সুলভ মূল্যে পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছি বিগত একশো বছরে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের হাসির গল্পের সমষ্টি থেকে। গল্প নির্বাচন ও সম্পাদনার দুরূহ কাজে বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয়া লীলা মজুমদার-এর সানুগ্রহ সহযোগিতা আমাদের কৃতার্থ ও কৃতজ্ঞতাভাজন করেছে।
প্রতিটি গল্পের সঙ্গেই সংযোজিত হয়েছে পরিপূরক চিত্র। আশা করি আমাদের এই নবতম প্রয়াস সহৃদয় পাঠকদের পরিতৃপ্ত করবে।