কুরআনের তাফসীর বললেই সবার আগে যে তাফসীরগুলোর নাম উঠে আসে তার মধ্যে বিখ্যাত তাফসীরগুলোর একটি হচ্ছে তাফসীর ইবনে কাসির । তাফসীর ইবনে কাসির, তাফসির ফি যিলালিল কুরআন , তাফসীরে তাবারী , তাফসীরে মারেফুল কুরআন ,তাফহীমুল কোরআন, তাফসীর জালালাইন সব গুলোই একে একটি বিখ্যাত তাফসির।
তাফসীর গ্রন্থ বলতে গতানুগতিক যা বুঝি ;এই বইটি অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে অনেক বেশ আলাদা। ডক্টর আবদুল্লাহ আযযাম (রহঃ) এর বক্তৃতামালার সংকলনের মধ্য হতে এই বইটি লিখিত। তাহলে কি হবে । বহু তাফসীর গ্রন্থের মধ্যে এই গ্রন্থ অতুলনীয় ও স্বীয় মহিমায় ভাস্বর। শায়খের অভিজ্ঞতা আর ইল’মের ভান্ডারে পরিপূর্ন ও উদ্ভাসিত;যা একেবারে বিরল।
.
.
“ফিলিস্তিন থেকে আফগানিস্তান”- জিহাদের উঁচু ভুমি থেকে শায়খের শুভাগমন। ছোটবেলা থেকে ইহুদীদের অত্যাচার দেখে বড় হওয়া শায়েখ জীবনে সবকিছু খুব কাছ থেকে দেখেছেন। শায়খ আবদুল্লাহ আযযামের স্বতন্ত্রতা আর মুন্সিয়ানা এখানেই। অত্যাচারিত মানুষের মুখে অত্যাচারের প্রকৃত ইতিহাস শোনা আর নিউজপেপারে শোনা ইতিহাসে বিস্তর ফারাক আছে। যৌবনের অধিকাংশ যিনি কাটিয়েছেন জিহাদের ময়দানে, তার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আর অন্য কারো অভিজ্ঞতার কতটুকু পার্থক্য আছে তা এই বই পাঠ করলে বুঝা যাবে।
.
.
জিহাদের ভুমিতে যার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, মুজাহিদদের মাঝে যিনি ছিলেন অনন্য ও খ্যাতি ছিলো বিশ্বজোড়া , ইখলাস ও লিল্লাহিয়াতের প্রজ্বোল উপমা তার জন্য সবকিছু বুঝা ও উপলব্ধি করা সহজ ছিল। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তার প্রতিটা বক্তৃতা সাজাতেন; এবং তিনি তার বক্তৃতার পরতে পরতে এই অভিজ্ঞতার আলোকমালা সাজিয়ে রেখে গেছেন।
.
.
আমাদের দেশে মুসলমানের সংখ্যা অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশি যা আমাদের গর্বের কারন বটে। কিন্তু অজ্ঞতাও অনেক বেশি যার ফলে আমরা সাচ্ছা দ্বীনের খিদমত করা মুজাহিদদের ভ্রষ্ট ভাবি। আমরা জিহাদ আর সন্ত্রাসের ভেতর পার্থক্য করতে পারি না । অথচ অনেকে মুজাহিদদের সন্ত্রাসী বলে ও জিহাদ সম্পর্কে কটুক্তি করে বেঈমান হয়, অথচ এর জন্য সাধারন অনুভুতিটিই আমাদের হারিয়ে গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কি ? জিহাদ আসলে কি? কারা জিহাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ? পাশ্চাত্য সভ্যতার ধারক ও বাহকেরা কেন চায় না সত্যিকার মুসলমানের জাগরণ হউক!তারা এর খেলাফ কি করছে আর আমরা কি করছি! কোনটা সন্ত্রাস আর কোনটা জিহাদ। এসব প্রশ্নের উত্তর এই বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে লেখকের সমৃদ্ধ জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে।
.
.
এছাড়াও সাহাবা কেরামদের রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন , তাবেই ও তাবে-তাবেঈনদের ও আকাবীরে উম্মতের ঈমানদীপ্ত জীবন, তারা কিভাবে রাসুল (সাঃ) ও ইসলাম কে ভালোবাসত। তারা কিভাবে ইসলামকে দেখত, আমরা কিভাবে দেখি। গল্পাকারে আলোচনার ভঙ্গীতে সুন্দর করে উপস্থাপনা করা হয়েছে উক্ত তাফসীর বইতে, যা আমাদের মন ও হৃদয়কে বিগলিত করে। নির্জীব প্রাণ সজীব হয়ে উঠে।আধুনিককালের বিভিন্ন ফিতনা ও ব্যাখ্যা সম্বলিত হওয়াতে এই বইয়ের আরো গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে।
.
.
এছাড়া শায়খের আমেরিকা ভ্রমণ ও কাছ থেকে দেখা তাদের সংষ্কৃতি ও গনতন্ত্র , তাদের জীবন ধারন পদ্ধতি, সেখানে বসবাসরত মুসলমান কমিউনিটি হাল-চাল ও পাশ্চাত্য ঘুনে ধরা সংষ্কৃতি ইত্যাদি লেখক তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতা মুসলিম দের সম্পর্কে কি ভাবে , তাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বসবাস করার হুকুম আহকাম কি ইত্যাদি লেখক আলোচনা ও জানার প্রয়োজনে তুলে ধরেছেন।
.
.
আরবী “ফি জিলালী সুরাতিত তাওবাহ” বাংলা ভাষাভাষীদের খেদমতের জন্য অনুবাদ করার কষ্ট স্বীকার করেছেন বিশিষ্ট মুহাদ্দিস মাওলানা নাসীম আরাফাত। নবম হিজরীতে অবতীর্ন সুরা তাওবার তাফসীর মোট পঁয়ত্রিশটি চ্যাপ্টারে ভাগ করে পেশ করা হয়েছে। ১২৯ টা আয়াতের ব্যাখ্যা প্রায় সাড়ে চারশত পৃষ্ঠা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। কি আছে এই সুরার ভেতর যে; লেখক এত গুরুত্ব সহকারে প্রতিটি লাইন ও অক্ষরের ব্যাখার প্রয়োজন বোধ করলেন? এতে আছে জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ। আর বুদ্ধিমানদের জন্য আছে সিরাতুল মুস্তাকীম বা সরল পথের ঠিকানা। সকল জ্ঞান অনুসন্ধানীদের অবশ্য পাঠ্য তালিকায় এই বই থাকা উচিত বলে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত।