দুআ (দোয়া):
সংজ্ঞা: দুআ হল ইসলামে আল্লাহর (ঈশ্বরের) কাছে মিনতি করা বা ব্যক্তিগত অনুরোধ করা। এটি এমন একটি প্রার্থনা যেখানে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে নির্দেশনা, ক্ষমা, আশীর্বাদ বা অন্য কিছুর জন্য প্রার্থনা করে।
গুরুত্ব: দুআ একজন ব্যক্তি এবং আল্লাহর মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রত্যক্ষ মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হয়। মুসলমানদেরকে তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুআ করতে উৎসাহিত করা হয়, জাগতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উভয় বিষয়েই আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা ও সাহায্য কামনা করা হয়।
পদ্ধতি: দুআ যেকোনো ভাষায় করা যায়, এবং ব্যক্তিগতভাবে বা প্রকাশ্যে করা যায়। যাইহোক, দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট সময় এবং উপলক্ষ রয়েছে, যেমন নামাযের সময় (নামাজ), রোজা রাখার সময় (রমজানে) এবং শুক্রবার।
জিকর (জিকর বা জিকির):
সংজ্ঞা: জিকর বলতে নির্দিষ্ট বাক্যাংশ, কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ বা উল্লেখকে বোঝায়। এটি আধ্যাত্মিক অনুশীলনের একটি রূপ যার অর্থ একজনের হৃদয় ও মনকে আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রাখা।
তাৎপর্য: যিকর হল আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে শক্তিশালী করার একটি মাধ্যম। এটি মননশীলতা এবং কৃতজ্ঞতা বিকাশে সহায়তা করে। এটি প্রায়ই অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং প্রশান্তি অর্জনের উপায় হিসাবে দেখা হয়।
পদ্ধতি: জিকির বিভিন্ন রূপ নিতে পারে, যার মধ্যে "সুবহানাল্লাহ" (আল্লাহর মহিমা), "আলহামদুলিল্লাহ" (আল্লাহর প্রশংসা) এবং "আল্লাহু আকবার" (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) এর মতো শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি সহ। এটি গোষ্ঠী সমাবেশগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে যেখানে এই বাক্যাংশ বা আয়াতগুলি একসাথে আবৃত্তি করা হয়।
দুআ এবং জিকর উভয়ই একজন মুসলমানের আধ্যাত্মিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান, এবং সেগুলি এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে। তারা আল্লাহর দিকনির্দেশনা এবং করুণা খোঁজার একটি উপায় হিসাবে কাজ করে, সেইসাথে একজনের বিশ্বাসের সাথে দৃঢ় সংযোগ বজায় রাখার একটি উপায়। বিভিন্ন ইসলামী ঐতিহ্য এবং চিন্তাধারার নির্দিষ্ট বাক্যাংশ বা দুআ এবং জিকর করার পদ্ধতিতে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু মূল ধারণাগুলি সমগ্র ইসলামী বিশ্বে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
বিসমিল্লাহ আল-রহমান আল-রহিম (بسم الله الرحمن الرحيم): এটি কুরআনের শুরুর বাক্যাংশ এবং প্রায়শই কোন কাজ শুরু করার আগে পাঠ করা হয়। এটি অনুবাদ করে "আল্লাহর নামে, পরম করুণাময়, পরম করুণাময়।"
খাবার শুরু করার দুআ: "বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ" (بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ)। এর অর্থ "আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর আশীর্বাদে।"
ঘুমানোর আগে দোয়া: "আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহিয়া" (اللهم بِاسمِكَ أَموتُ وَأَحيا)। এর অর্থ "হে আল্লাহ, তোমার নামে, আমি মরি এবং আমি বাঁচি।"
ক্ষমার জন্য দুআ: "আস্তাগফিরুল্লাহ" (أستغفر الله), যার অর্থ "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।"
ধৈর্যের জন্য দুআ: "রাব্বি ইন্নি মাসানিয়াদ দুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহীমীন" (رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ)। এর অর্থ "হে আমার প্রভু, সত্যিই প্রতিকূলতা আমাকে স্পর্শ করেছে, এবং আপনি দয়ালুদের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু।"
হেদায়েতের জন্য দুআ: "রাব্বি জিদনি ইলমা" (رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا)। এর অর্থ "হে আমার প্রভু, আমাকে জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।"
সুরক্ষার জন্য দুআ: "হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া" (حسبي الله لا إله إلا هو)। এর অর্থ "আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।"
ভ্রমণের জন্য দুয়া: "সুবহানাল্লাহি সাখখারা লানা হাদা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরীনীন ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন" (سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا رَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقَرِينَ وَمَا كُنَّا لَهُ مُقَرِينَ ا لَمُنقَلِبُونَ)। এর অর্থ "মহান তিনি যিনি এটি আমাদের বশীভূত করেছেন, এবং আমরা এটিকে [অন্যথা] বশীভূত করতে পারতাম না। এবং অবশ্যই, আমাদের পালনকর্তার কাছে আমরা [নিশ্চয়]] ফিরে যাব।"
একজন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ: "আস'আলুল্লাহ আল-আযিম রব আল-আরশ আল-আযিম আন ইয়াশফিয়াক এর অর্থ আমি মহান সিংহাসনের মালিক মহান আল্লাহর কাছে আপনাকে সুস্থ করার জন্য প্রার্থনা করছি।